কলকাতা ব্যুরো: কলকাতায় আসন্ন পুরভোট। আর মাত্র ৮ দিন পর ভোট। বোর্ড গৈঠন করলে শহরের উন্নয়নের স্বার্থে কী কী করবে তৃণমূল, তারই তালিকা দিয়ে ইস্তেহার প্রকাশ করল ঘাসফুল শিবির। শনিবার ‘১০ দিগন্তের কলকাতা’ নামে সেই ইস্তেহার প্রকাশ করলেন দলের সভাপতি সুব্রত বক্সী। উপস্থিত ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের মতো দলের প্রথম সারির নেতা নেত্রীরা।
সুব্রত বক্সী এদিন বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কল্লোলিনী কলকাতা গড়ে তুলেছেন। আপনাদের সমর্থন পেলে সেই কাজকেই আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন কলকাতা পুরসভার প্রতিনিধিরা। আগামীদিনে কলকাতার মানুষ যদি সমর্থন করেন, যেখানে কাজ শেষ করেছে সেখান থেকেই শুরু হবে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবার উন্নতি থেকে শুরু করে মহিলা নিরাপত্তায় নজর–এসব দিকেই জোর দেওয়া হয়েছে ইস্তেহারে। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো কলকাতা পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে মহিলাদের জন্য শৌচালয়। নারীদের দৈনন্দিন সুবিধার কথা মাথায় রেখে এই ঘোষণা করা হলো। শনিবার দুপুরে মহারাষ্ট্র নিবাস থেকে দলীয় ইস্তেহার প্রকাশ করলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। বাংলা ছাড়াও হিন্দি, উর্দু ও ইংরাজি ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে ইস্তেহারটি।
তৃণমূলের ইস্তেহারে কী কী প্রতিশ্রুতি রয়েছে? দেখে নিন এক নজরে!
পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে জোড়াবাগান এবং গড়িয়া অঞ্চলে জয় হিন্দ বুস্টার পাম্পিং প্রকল্পের আরও শক্তি বৃদ্ধি করা হবে। এই স্টেশনগুলির ক্ষমতা বাড়িয়ে যাদবপুর এবং টালিগঞ্জে জলের সমস্যা মেটানো হবে।
শহর কলকাতার বহু জায়গায় নিকাশীর সমস্যা রয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারনে খুব সহজেই জল জমে। কিন্তু, সর্বশক্তি দিয়ে ২ ঘণ্টার মধ্যে জল নামানো হয়। এই ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং মানুষকে আরও সুরাহা দিতে ২০০টি অতিরিক্ত পাম্প বসানো হবে।
কলকাতা পুরসভার সমস্ত ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। নগর পরিষেবায় আরও একটু নজর দিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে আরও উন্নত মানের করে তোলা হবে। ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি তৈরি করা হবে সাবসেন্টারও।
কলকাতার রাস্তায় কোথাও যদি মসৃণতার অভাব থাকে তবে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের পক্ষ থেকে সমস্ত রাস্তা গর্তবিহীন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ইস্তেহারে।
প্রকটভাবে ডেঙ্গি না হলেও অল্পমাত্রায় এই রোগ এখনও ছড়িয়ে পড়ছে। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য ৩০টি ডেঙ্গি নির্ধারণ কেন্দ্র তৈরি করা হবে শহরে।
ইতিমধ্যেই বহু নাইট শেল্টার তৈরি করা হয়েছে। গোটা শহরে মোট আটটি এমন নাইট শেল্টার রয়েছে। সংখ্যা বাড়িয়ে আরও এমন চারটি শেল্টার তৈরি করা হবে। যাতে ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ এক একটি শেল্টারে রাত্রিবাস করতে পারেন।
পাড়ায় পাড়ায় সমস্যা নিষ্কৃতী সেল তৈরি হবে।
কলকাতা পুরসভার কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা, ন্যূনতম বেতন, ভালো পরিবেশে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
পার্ক, বাজার, ঘাট সংস্কার করে পরিমার্জন করা হবে। আরও পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন পুর প্রতিনিধিরা।
প্রতি ওয়ার্ডে কমিউনিটি হল, প্রতি ওয়ার্ডে লেডিস টয়লেট, শিশুদের বিশ্রামাগার তৈরি করা হবে।

এদিন ইস্তেহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ডের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের আরও একবার ভোটের লড়াইয়ে নামার আগে ভোকাল টনিক দিয়েছেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবুর বক্তব্য, ১৪৪ টি ওয়ার্ডেই আমরা জিতব। কোথায় কোথায় আমাদের দুর্বলতা রয়েছে, কোথায় কাজ বাকি, সেদিকে আরও বেশি করে নজর দিতে হবে। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা মনে রাখবেন, যেন সারাবছর এলাকায় আপনাদের দেখা যায়।
অন্যদিকে বিজেপির দেখাদেখিই পুরভোটে ইস্তেহার প্রকাশ করতে চলেছে তৃণমূল। শনিবার নিউটাউন ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে এমনই দাবি করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিলীপ ঘোষ বলেন, পুরভোটেও যে আলাদা করে ইস্তাহার প্রকাশ করা যায়, সেটা বিজেপিই দেখিয়েছে। তৃণমূল তা অনুসরণ করছে।
দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, ওরা (তৃণমূল) ম্যানিফেস্টো বের করছে খুব ভালো কথা। তবে ওরা সেটাকে ম্যানিফেস্টো বলতে রাজি নয়। কর্পোরেশনেও যে ইস্তেহার হতে পারে সেটা উদাহরণ। বিজেপি তা বের করেছে। ওরাও ভাবছে মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া দরকার। মানুষের জানা দরকার। যদিও বিধানসভা ভোটের আগেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও পালন কিছুই করেনি। এবারও দিক প্রতিশ্রুতি। কমপক্ষেব মানুষ বুঝবে কোন পার্টি কী করতে চাইছে, কী বলতে চাইছে।