কলকাতা ব্যুরো: সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতে সংসদ ভবনের ঐতিহ্য নিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও সোমবার বিরোধীদের প্রতিবাদ স্লোগান, হই-হট্টগোলে দুপুর ১২টা অবধি মুলতুবি হয়ে যায় সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশন। সংসদ ভবনের গান্ধী মূর্তির পাদদেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হন কংগ্রেস ও তৃণমূল সাংসদরা। বিরোধীদের অভিযোগ, কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কোনওরকম আলোচনা চায় না মোদী সরকার। এরপর তৃণমূল ও কংগ্রেসের অনুপস্থিতিতেই ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গেল কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল।

শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল-সহ একাধিক বিল পেশ করার কথাই ছিল কেন্দ্রের তরফে। লোকসভায় বিলটি পাশ হওয়ার পর রাজ্যসভায় পেশ করতে চাইছিল কেন্দ্র। শুক্রবারই কৃষি আইন প্রত্যাহার বিলের নমুনা রাজ্যসভার সমস্ত সদস্যকে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও এদিন ক্রিপ্টো কারেন্সি, SC-ST সংশোধনী বিল পেশ করবে কেন্দ্র। সেই মতোই বেলা ১২টার পর কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল, ২০২১ পেশ করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর এবং ধ্বনিভোটে তা সঙ্গে সঙ্গেই পাশ হয়ে যায়।
বিরোধীরা কৃষি আইনের উপর আলোচনার দাবি করেছিল, তা খারিজ করে দেয় সরকার পক্ষ। বিরোধীদের অভিযোগ, আলোচনায় রাজি ছিল না সরকার পক্ষ। তারা দ্রুত বিল পাশ করাতে তৎপর ছিল। এরপর বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিরোধীরা। পরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস ও তৃণমূল সাংসদরা।
গান্ধী মূর্তির বাইরে সেই অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভাপতি সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী ৷ কংগ্রেসের এই বিক্ষোভে রাজ্যসভার নেতা রাজ্যসভার নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী সামিল হন৷ আজ সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। যে বৈঠকে কৃষি আইন প্রত্যাহার এবং অন্যান্য ইস্যুতে শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধী ঐক্যমত গঠনের জন্য এই বৈঠক করেছিল কংগ্রেস। যে বৈঠকে তৃণমূল সাংসদরা অংশ নেননি।
এ দিন তৃণমূলের তরফেও মহাত্মা গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এদিন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেনরা বিক্ষোভ দেখান। লোকসভায় কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা কিন্তু, কেন্দ্রের তরফে বিরোধীদের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বেলা ১২টার পর অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ধ্বনি ভোটে লোকসভায় বিলটি পাশ হয়ে যায়।
সোমবারের সংসদ ভবনে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, তর্কবিতর্ক, প্রশ্নোত্তর চলুক সংসদে। তবে তাতে যেন কখনও সংসদ ভবনের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ না হয়, চেয়ার অমর্যাদা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা সকলের কর্তব্য। এদিন প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে খণ্ডন করেছে বিরোধীরা। তাদের কথায়, প্রধানমন্ত্রী যে কোনও বিষয়েই আলোচনা থেকে পালিয়ে যান। এরপরেই কৃষক পরিস্থিতি, পেগাসাস-সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তুলে অধিবেশন কক্ষে হই-হট্টগোল শুরু করেন বিরোধীরা। তখনই বেলা বারোটা পর্যন্ত সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়।
এই বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ ব্রায়েন টুইট করে কটাক্ষ করেছেন মোদীকে। ডেরেকের বক্তব্য, আপনিই আলোচনা থেকে সরে থাকেন। সমস্যা হল, আপনার মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ আপনাকে বোঝাতে পারেননি যে সংসদ ভবন মন কি বাতের জায়গা নয়।
যদিও বিরোধীদের বিক্ষোভকে আমল না দিয়ে তৃণমূল ও কংগ্রেসের অনুপস্থিতিতেই পাশ হয়ে গেল কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল।