কলকাতা ব্যুরো: আগরতলা পুর নির্বাচন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই সরগরম ত্রিপুরা। বিজেপি তথা বিপ্লব দেব সরকারের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর বৃহস্পতিবার ভোটের পর ফের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ঘাসফুল শিবির। শুক্রবারই তারা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবে বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের দাবি, বৃহস্পতিবার যা হয়েছে, তা আসলে ভোটের নামে প্রহসন। তাই পুনর্নির্বাচনের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভোটকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত ছিল ত্রিপুরা। আক্রান্ত হয়েছেন খোদ তৃণমূল প্রার্থীই। আগরতলার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তপন কুমার বিশ্বাসকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে। তাঁর চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে। পাশাপাশি আগরতলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী পদ্মা ভট্টাচার্যের ছেলে ধীমান ভট্টাচার্যকেও আক্রমণ করা হয়। তাঁকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

এছাড়া এদিন সকালেও আগরতলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মক পোলিং চলাকালীন দুই তৃণমূলকর্মী আক্রান্ত হন। তাদের নাম কৃষ্ণ নুপুর মজুমদার ও মনোজ চক্রবর্তী। লাঠির আঘাতে তাদের মাথা ফেটে গিয়েছে বলে খবর। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ মূলত বিজেপির বিরুদ্ধে।
ত্রিপুরায় বিজেপি মুখপাত্র নবেন্দ্যু ভট্টাচার্য বলেন, পরিকল্পনামাফিক এইসব করা হচ্ছে। তৃণমূলের অভিযোগের কোনও গুরুত্বই নেই। ওরা নিজেরাই সন্ত্রাস করে, তারাই আবার সন্ত্রাসের অভিযোগ আনছে। তৃণমূল কর্মীরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল করছে।

তবে বিজেপির দাবি মানতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। তারা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টা থেকে আগরতলায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে সকাল থেকেই অশান্তির খবর মিলেছে রাজ্য জুড়ে। তৃণমূলের তরফে প্রার্থী ও কর্মীদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। সিপিআইএমের তরফেও দাবি করা হয়েছে যে, বিজেপি রিগিং করছে। ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের শাসানো হচ্ছে।

আর অশান্তির খবর মিলতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর অতিরিক্ত দুই কোম্পানি পাঠানোর নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে বলা হয়েছে শীর্ষ আদালতের তরফে। ভোট গণনা শেষ না হওয়া অবধি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে বলেই জানানো হয়েছে।

ত্রিপুরায় বারংবার নির্বাচনী প্রচারে বাধা পাওয়ায় গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে শীর্ষ আদালতের তরফে সেই আর্জি খারিজ করে বলা হয়েছিল, গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় নির্বাচন স্থগিত রাখাটা একটি চরম পদক্ষেপ। যদি অন্য আর কোনও উপায় না থাকে, একমাত্র তাহলেই একেবারে শেষ উপায় হওয়া উচিত এটি।

শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ পর্ব থেকে শুরু করে ফল ঘোষণা, গোটা প্রক্রিয়া যাতে নির্বিঘ্নে সম্পূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয় ত্রিপুরা পুলিশকে।

আগরতলা পুরনিগম, ১৩টি পুর পরিষদ এবং ৬টি নগর পঞ্চায়েত। এই ২০টি পুর অঞ্চলের মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২২টিতে এদিন চলে ভোটাভুটি। ২৮ নভেম্বর ভোটগণনা।