কলকাতা ব্যুরো: দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এই প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হয়। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিএসএফ সংক্রান্ত নয়া আইন প্রত্যাহার করার আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, ত্রিপুরার হিংসা নিয়েও মোদীর কাছে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। তবে বিএসএফ ও ত্রিপুরা নিয়ে অসন্তোষের মাঝেই বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বোধন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মমতা। যা তিনি গ্রহণ করেছেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন বিএসএফ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বিশেষ আর্জি রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এদিন মমতা বলেন, বিএসএফ-এর সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধিতা নেই। কিন্তু, বিএসএফ-এর ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে রাজ্যের সমস্যা হয়ে যায়। ওঁদের গুলিতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত হয়েছেন অনেক নিরীহ গ্রামবাসী। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে অযথা সমস্যা না দেখা দেয়, তার জন্যই প্রধানমন্ত্রী কাছে এই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি।
মোদীর সঙ্গে বৈঠক শেষে এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কোভিড নিয়ে আলোচনা করেছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। আরও টিকা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। আরও ডোজ চেয়েছি। এখনও পর্যন্ত সাড়ে আট কোটি টিকা পেয়েছি। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য এবার টিকা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। কারণ ইতিমধ্যেই স্কুল-কলেজ খুলে গিয়েছে আমাদের রাজ্যে।

পাশাপাশি এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, আমাদের রাজ্যে জুট শিল্পীরা সমস্যায় রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি বাংলায় সবচেয়ে বেশি জুট উদপাদন হয়। ক্যাগের কারণে চাষিদের সমস্যা হচ্ছে। হোর্ডাররা জুট ধরে রাখে, যার জেরে একাধিক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ১০০ শতাংশ সহায়তা করবেন। জুট কমিশনারকে বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে বিচার করার অনুরোধ জানিয়েছি। চাষিরা যাতে MSP পায়, তা নিয়েও অনুরোধ জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে।
এছাড়া বৈঠকে উঠে আসে ত্রিপুরায় হিংসার প্রসঙ্গও। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ত্রিপুরার হিংসা নিয়ে সবটা জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে। রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকবেই। আপনাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক দলের আদর্শ আলাদা। কিন্তু, এতে রাজ্যের উন্নয়নে যেন কোনও বাধা না আসে। সায়নী ঘোষের মতো স্টারের সঙ্গে এমনটা হচ্ছে, সাংবাদিকদের উপর হামলা হচ্ছে। সবটাই জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে।

অন্যদিকে আগামী ২১ এপ্রিল রাজ্যে বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের বৈঠকে তাঁকে BGBS উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলেও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে শিল্পের প্রসার, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থানের উপর জোর ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলেও জানান মমতা। কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ে রাজ্য তথা গোটা দেশেই শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতিতে একযোগে কাজ করলে ভবিষ্যতের রাস্তা খুলবে বলেই মনে করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।