কলকাতা ব্যুরো: চতুর্থীর সন্ধ্যার কলকাতা দেখলে কে বলবে, এখনো দেশে লাগু রয়েছে মহামারী আইন। করোনা সংক্রমণ রুখতে না কি এখনো এ রাজ্যে সরকার লোকাল ট্রেন চালানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। এখনও খুলছে না সিনেমা হল, থিয়েটার হল। সেই রাজ্যেই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে একদিকে বাজারগুলোতে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ভিড় যেমন রয়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে পূজামণ্ডপগুলোতে রয়েছে দর্শকের ভিড়।

যদিও কলকাতা হাইকোর্ট গতবছর মণ্ডপে নো এন্ট্রি যে নির্দেশ দিয়েছিল, এবার সেই নির্দেশ সংশোধন করতে গিয়ে কিছু ছাড় দিয়েছে। আর তাতেই চতুর্থীর কলকাতা ফিরে গিয়েছে পুরনো মোডে। যা দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত চিকিৎসক মহল। তাদের আশঙ্কা, হাইকোর্টের গতবারের সেই কড়া পদক্ষেপ বজায় না থাকায় এবার তৃতীয় ঢেউ একরকম ডেকে আনছে জনতাই।

আর জনতার সেই আত্মঘাতী উৎসাহে সমানে মদত দিচ্ছেন পুজোর উদ্যোক্তা থেকে রাজনৈতিক নেতা তথা জনপ্রতিনিধিরা। শাসক দলের নেতাদের পুজোয় ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই যে এবারেও মণ্ডপে নো এন্ট্রি নির্দেশ বজায় রয়েছে। আর কলকাতা পুলিশ তাদের ফেসবুক ওয়ালে যা লিখেছে তাতে জনতার উৎসাহ আর পুলক বাঁধভাঙ্গা হওয়ার অবশ্যই সুযোগ রয়েছে। পুলিশ লিখছে, চতুর্থী থেকেই সব মন্ডপ খুলে দেওয়া হবে। যা নিয়ে যারপরনাই বিরক্ত নাগরিক সমাজের একাংশ। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, এবারেও দরকার ছিল বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর গতবারের সেই একই নির্দেশ।

যদিও এবার বিচারপতি ইন্দ্র প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় আগের রায় সংশোধন করতে গিয়ে বলে দিয়েছেন, আগের তুলনায় এখন করোনা পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার শুরু হওয়ায় বিষয়টিকে হাইকোর্ট ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছে। আর তাই অঞ্জলি, সিঁদুর খেলা, আরতির মত উপাযচারে রাজ্য সরকারের ঘোষণাতেই কার্যত সীলমোহর দিয়েছে হাইকোর্ট।

এদিন ভিড়ের অবস্থা দেখে রীতিমতো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে করোনা আবার বেড়ে যাবার। এমনিতেই করোনায় রাজ্যের ভালো থাকার দিনগুলি এখন আবার ক্রমশ চিন্তা জাগাচ্ছে। এক সমীক্ষায় পজিটিভিটি রেট নিয়ে চিন্তা বাড়িয়েছে চিকিৎসকদের। ফলে এই পরিস্থিতিতে এবার দুর্গা পূজার আগেই যেভাবে মন্ডপে বেপরোয়া ভিড় শুরু হয়েছে, আর তাতে সব পক্ষের যেমন প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে, তাতে দুর্গাপুজোর পর পরিস্থিতি কি হবে সে ব্যাপারে সন্দিহান চিকিৎসকরা।

ভিআইপি রোডের শ্রীভূমির পুজো থেকে দমদম পার্ক তরুণ সংঘ বা একডালিয়া এভারগ্রীন হয়ে বড়িশা র পুজো –শুক্রবার থেকেই তথাকথিত নামি মণ্ডপগুলি দেখে নিতে দলে দলে জনতা বেরিয়ে পড়েছিল রাস্তায়। শনিবারও সেই একই ছবি। আর যত্রতত্র গাড়ি রেখে দিয়ে মন্ডপ দেখে আসার জনতার এই অসংগঠিত ছকে শনিবার দিনের বেলাতেই বহু রাস্তায় তুমুল যানজট তৈরি হয়। রাস্তার দুধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মন্ডপ দেখতে যাওয়ার ভিড়ে আটকে পড়ে বাস সহ অন্যান্য যানবাহন। রাস্তার ধারে রেখে দেওয়া গাড়ি সরাতে কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি পুলিশের তরফে।

আবার এদিনই করোনা বিধির থেকে ছাড় দেওয়া হল রেস্তোরাঁ এবং পানশালা গুলিকে। রেস্তোরাঁ ও পানশালা গুলি স্বাভাবিক সময়ের মতো খোলা রাখা যাবে। ফলে পুজোর ক’দিন ঘোরাঘুরির পর মাঝরাত পর্যন্ত রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাওয়া নিশ্চিত করে দিল রাজ্য সরকারই। তাই চিকিৎসক বা নাগরিক সমাজের সচেতন অংশ যতই গেল গেল রব তুলুক, কুছ পরোয়া নেই।

যত পারুন ভিড় করে ঠাকুর দেখুন, রেস্তোরাঁয় গিয়ে গাদাগাদি করে খাওয়া-দাওয়া করুন, আর পানশালাতে রাত পর্যন্ত চলুক নাচাগানা, পানাহার। তাতে যদি ভয় পেয়ে করোনা পালায়, এখন সেটাই একমাত্র চাওয়া সুস্থ ভাবনার নাগরিকদের।