কলকাতা ব্যুরো: মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সময় যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে বর্ষণ। মঙ্গলবার বৃষ্টির কারনে যত শীঘ্র সম্ভব কাজ সেরে ঘরমুখো হয়েছেন সাধারণ মানুষ। বৃষ্টির আবহাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছেন অনান্য দিনের তুলনায় কিছুটা আগেই। সকালেও রুটিন মেনে বিছানা ছাড়তে মন চায়নি। তবে এর মধ্যে এতবড় অঘটন ঘটে যাবে তা হয়তো আঁচ করতে পারেন নি আহিরিটোলা লেনের কোনও মানুষই। সকালে উঠে দেখেন সব শেষ। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থা কাটিয়ে দ্রুত সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেও তখন যে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। হুড়মুড়িয়ে দোতলা বাড়ি ভেঙে চাপা পড়েছেন ২ বছরের এক শিশু সহ মোট ১৭ জন।
প্রথমে দেওয়াল ভেঙে কয়েকজনকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। পুলিশ, দমকল ও এনডিআরএফ-কে সঙ্গে নিয়ে এক দম্পতি, তাঁদের ২ বছরের শিশুকন্যা (সিজিকা ঘড়াই) ও পরিবারের আত্মীয়া ওই প্রৌঢ়াকে (চাঁপা ঘড়াই) উদ্ধার করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। গ্যাস কাটারের সাহায্যে বেশ কিছুটা অংশ কেটে উদ্ধারকাজ চালানো হয়। পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু ও আরজি কর হাসপাতালে মৃত্যু হয় প্রৌঢ়ার। তবে তাঁদের মধ্যে বাড়ির গৃহিণী ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা (মৃতা শিশুর মা) ৷ আহত অবস্থায় তাঁকে আরজি করে ভর্তি করা হলে তিনি একটি সুস্থ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন বলে জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে বর্তমানে মা এবং শিশু দু’জনেই ভালো রয়েছেন। মাকে রাখা হয়েছে এইচডিইউতে এবং বেবি নার্সারিতে রয়েছে শিশুটি। জানা গিয়েছে ওই মহিলার নাম গঙ্গা ঘড়াই।

তবে শত কষ্ট সহ্য করে নতুন সন্তানের পৃথিবীর প্রথম আলো দেখানোর পরম তৃপ্তিকে ছাপিয়ে গেলো সন্তান হারানোর যন্ত্রণা। মারা গিয়েছেন নিজের শাশুড়িও। নতুন সন্তানকে আগলে রাগলেও নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না মা। সন্তান জন্ম দেওয়ার কষ্ট এবং দুর্বলতা থাকলেও মায়ের চোখ যে অনবরত খুঁজে বেড়াচ্ছে তাঁর প্রথম কন্যাসন্তানকে।
উল্লেখ্য, এদিন গঙ্গার আরেক সন্তানকে বাঁচানোর জন্য তাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিল পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দোতলা বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চলছিল উদ্ধারকাজ। দুই বছরের ওই শিশু চিন্তায় বাইরে দাঁড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন অন্তঃসত্ত্বা মা। শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে বাইরে বার করা সম্ভব হয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এরপরেই কান্নায় ফেটে পড়েন ওই মহিলা।

তবে আহিরীটোলার বাড়ি ভেঙে পড়ার দায় ইঁদুরের উপ্রেই চাপিয়েছেন কলকাতা পুরনিগমের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর বিজয় উপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ডালপট্টি এলাকায় ইঁদুরের দৌরাত্ম্যে নড়ে যাচ্ছে বাড়ির ভিত। তারই জেরে ঘটেছে বাড়ি ধসে পড়ার ঘটনা। পুরনিগমের আরও দাবি, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি উত্তর কলকাতার ডালপট্টি এলাকা। সেখানে বড় বড় ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেগুলিই এলাকার বাড়িগুলির ভিতের মাটি কেটে সাফ করে দিচ্ছে। আলগা হয়ে পড়ছে বাড়ির ভিত। সেই কারণে অধিকাংশ বাড়ির কাঠামোটাই নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে ৷ বাড়ছে বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা।
বিপজ্জনক বাড়ি লিখে দেওয়া সত্ত্বেও ভাড়াটেরা বাড়ি খালি করতে চান না এবং পুরনো বাড়ি মেরামতে উদ্যোগী হন না বাড়িওয়ালারাও। তারই জেরে এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে বলে দাবি বিজয় উপাধ্যায়ের। বাড়ি খালি করিয়ে দেওয়ার বা মেরামত করার কোনও আইন না-থাকায়, এ ব্যাপারে পুরনিগমের হাত পা বাঁধা বলে জানিয়েছেন তিনি।

আহিরীটোলা বাড়ি ভেঙে বিপর্যয়ে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। তাদের মধ্যে রয়েছে দু বছরের একটি শিশু। নাম সিজিকা ঘড়াই। তার দিদা চাঁপা ঘড়াইয়েরও মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় জোড়াবাগান থানা সূত্রের খবর, আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় ওই শিশু এবং তার দিদাকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিন্তু সেখানেই জরুরি বিভাগে চিকিৎসকরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, টানা বৃষ্টির জেরে বুধবার ভোররাতে ১০ নম্বর আহিরীটোলা স্ট্রিটের একটি বাড়ির একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ভোর রাতের দিকে তাঁরা কোনও কিছু ভেঙে পড়ার শব্দ পান ৷ প্রথমদিকে তাঁরা আমল দেননি ৷ পরে স্থানীয় দোকানদাররা দেখতে পান ৷ তারাই পুলিশে খবর দেয় ৷ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে যায় এক শিশু সহ বেশ কয়েকজন ৷ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ তাদের মধ্যেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে ৷

বাড়ি ভেঙে যাওযার পর উদ্ধারকাজে নামে পুলিশ, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। জরাজীর্ণ ওই বাড়ির ধ্বংসস্তুপ থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় আটকে থাকা শিশু-বৃদ্ধা সহ অন্যান্যদের উদ্ধার করল এনডিআরএফ, ডিএমজি, দমকল, পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে খবর, জরাজীর্ণ এই বাড়িটির একাংশ এদিন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে পৌনে সাতটা নাগাদ ভেঙে পড়ে। বিকট আওয়াজ শুনে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। প্রথমে স্থানীয়রাই উদ্ধার কাজে হাত লাগান।