কলকাতা ব্যুরো: মাকে জেলে পাঠানোর নিদান দিলে তা সন্তানের জীবনে একটা বড় কলঙ্ক হয়ে দাঁড়াবে। তাই, ধর্মাবতার, অন্য যে কোন শাস্তি দিন ওই মাকে, কিন্তু জেল নয়। আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আইনজীবীর এমন কাতর আবেদনে থমকে গেল আদালত। যদিও বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য শুক্রবার এর পরেই বলেন, আদালত অবমাননার এমন ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ এবং দুঃখিত। আবার নাবালক সন্তানের দিকে তাকিয়ে মানুষ হিসেবে হয়তো কিছু করার দরকার আছে, যদিও বিচারের দায়িত্বে থাকায় তার সেই দায়বদ্ধতাও আছে। কিন্তু আজ এই অবস্থায় রায় দিলে মনে হতে পারে, তিনি নিরপেক্ষ নন, তাই সোমবার পর্যন্ত রায়দান স্থগিত করা হলো। শুক্রবার নাটকীয় ভাবে বিবাহ-বিচ্ছেদের একটি মামলায় নিম্ন আদালতের নির্দেশ পালন না করায় মহিলার বিরুদ্ধে জেলের নির্দেশ দিতে গিয়েও আপাতত নাবালক সন্তানের দিকে তাকিয়ে থমকে থাকলো আদালত।
ভিড়ে ঠাসা এজলাসে উপস্থিত তখন ছোট্ট বাপ্পার (নামপরিবর্তিত) তখন মনে হচ্ছে এজলাসের দু ধরে দুটো যেন আলাদা দ্বীপ। অথচ ওরা তার বাবা আর মা। আর কালো কোর্ট পড়া সাদা চুলের জেঠু যে তাকে নিয়েই আলোচনা করেছেন, সেটা তাঁর বুজতে অসুবিধা হয়নি। কারণ সে সময় বাবা, মা দুজনেই চোখের জল ফেলছে। স্কুলে গেলে সবাই বলবে তোমার মা জেলে আছে…. উত্তর দিতে পারবে ছোট্ট বাপ্পা? বারং বার একই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন বর্ষীয়ান আইনজীবী অশোক ব্যানার্জি। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য আইনজীবির উদ্দেশে বলেন, আমিও শুধু ছোট্ট শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাবা মাযের মনোমালিন্য যার প্রভাব এসে পড়েছে শৈশবে। একজন মানুষ হিসেবে অবশ্যই সহমর্মিতা দেখাতে পারি। কিন্তু একজন বিচারক হিসেবে আমাকে আইনের পথেই চলতে হবে।
মামলার বয়ান অনুযায়ী ডক্টর শৈবাল বসু তিনি একজন অর্থনীতির অধ্যাপক স্ত্রী সুদীপ্তা বসু নন্দী। ২০১৮ সালে আলিপুর আদালত বাচ্চার হেফাজত চেয়ে মামলা দায়ের করেন ডক্টর শৈবাল বসু । তাঁর অভিযোগ বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান স্ত্রী সুদীপ্তা বসু নন্দী। একথা জানার পরেই আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসেন ডক্টর শৈবাল বসু। ২০১৮ সালের মে মাসে আলিপুর আদালত সন্তানের হেফাজত চেয়ে মামলা দায়ের করেন। আদালত সপ্তাহে শনি এবং রবিবার এই দুদিন বাচ্চার সাথে দেখা করতে পারবেন বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন আলিপুর আদালত। ২০১৯ সালে শৈবাল বাবুর বেহালার বাড়িতে দুর্গাপূজা হয় পুজোর কটা দিন নিজের সন্তানকে নিজের কাছে রাখার জন্য ফের আলিপুর আদালতে আবেদন করেন। তিনদিনের অনুমতি দিয়েছিল দেয় আদালত। পুজোর সপ্তমী অষ্টমী এবং নবমী এই তিন দিন তার সন্তান বাবার কাছেই থাকবে। আদালতের সেই রায় স্ত্রী মানেন নি। সেটা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেন শৈবাল বাবু।
শুক্রবার বিচারপতি নিশ্চিত ভাবেই জেলে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েই ফেলেছিলেন ওই মহিলাকে। কিন্ত শেষ বেলায় বর্ষীয়ান আইনজীবি অশোক ব্যানার্জি নাবালকের জন্য আকুতিতে রায় দান স্থগিত রাখে হাইকোর্ট। সোমবার সকালে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিচারপতি।