কলকাতা ব্যুরো: স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় আমকে বলা হয় “ফলের রাজা”। বিজ্ঞানসম্মত নাম “ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা”। কাঁচা ও পাকা উভয় আমেই রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। কাঁচা বা পাকা দুই ধরনের আমই শরীরের জন্য ভালো। আম খেলে শুধু রসনার তৃপ্তিই হয় এমনটা কিন্তু একদম নয়, এর অসীম গুণাগুণও রয়েছে। গ্রীষ্মকালে হিমসাগর, ল্যাংড়া হোক বা ফজলি, গোলাপখাস আম মানেই এক আলাদা আবেগ। খারাপ হোক বা ভালো তা না বুঝেই ব্যাগ ভর্তি করে বাজার থেকে কিনে আনা সবচেয়ে পছন্দের ফল আম। বারবার ঠকলেও এই ফল দেখে লোভ সম্বরণ করা যে খুব মুশকিল। গাছ থেকে ঢিল মেরে পেরে খাওয়া বা কালবৈশাখী ঝড়ে অন্ধকারে আম কুড়োতে যাওয়া সবটাই যে বাঙালি জীবনে বারবার ফিরে ফিরে আসে। তাই আমের সঙ্গে ভারতবাসী তথা ভোজনরসিক বাঙালির যে এক অদ্ভুত নাড়ির যোগ।
তবে বয়স বাড়ছে। শরীর আগের মতো হয়তো যুতসই নেই। খাওয়াদাওয়া করলেও অনেক মেপে করতে হয়। তারওপর সুগারের ভয়, মোটা হওয়ার আতঙ্ক, ব্লাড সুগার থেকে ক্যানসারের ভয় এসব তো সবসময় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু নাহ ভয়ের কোণও কারন নেই। আমের কোণও জবাব নেই। আর চিকিৎসকরা বলছেন একদম চিন্তা করবেন না। আম খান মন ভরে।

সম্প্রতি লখনউ-এর সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট ফর সাবট্রপিক্যাল হর্টিকালচার (CISH) এর বিজ্ঞানীরা তাঁদের নির্মিত এক বায়ো গার্ডেনে উচ্চ ঔষধি গুণ সম্পন্ন ও ক্যানসার প্রতিরোধক আম উৎপন্ন করছেন। যা খেলে সাপ ও মরবে আবার লাঠিও অক্ষত থাকবে। এই আম একদিকে যেমন রক্তের গ্লুকোজ লেভেল কমাতে সাহায্য করবে ঠিক তেমনই ক্যানসার প্রতিরোধক ও হার্টের বিভিন্ন রোগ উপশমে অব্যর্থ ভূমিকা নেবে, এমনটাই জানান CISH-এর ডিরেক্টর শৈলেন্দ্র রাজন। তিনি বিশ্বাস করেন এই বিশেষ আম চাষিদের আয়ের রাস্তাকে সুগম করবে। ক্রেতাদের শারীরিক দিকটাও সমানভাবে গুরুত্ব পাবে।
পাকা আমে রয়েছে প্রচুর খনিজ লবণ, ভিটামিন A, ভিটামিন C, ভিটামিন B-6, পটাসিয়াম, কপার লোহা, অ্যামাইনো অ্যাসাডি, বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। প্রোটিন, টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিডে ভরপুর পাকা আম। আমে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন A। চোখের দৃষ্টি বাড়ায়। রাতকানা রোগের হাত থেকে চোখকে রক্ষা করে। আমে রয়েছে ভিটামিন B কমপ্লেক্স। শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শরীর সতেজ রাখে। ঘুম ভাল হয়।

এছাড়া আমের বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন E এবং সেলেনিয়াম হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করে। আমে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে, স্তন ক্যানসার, লিউকেমিয়া, কোলন ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আম ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম, আমের হলুদ এবং কমলা অংশে বিটা কেরোটিন পাওয়া যায়। আমের সন্ধান পাওয়া বিটা ক্যারোটিনে অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। আমে থাকা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমের পলিফেনল স্তন ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধিকে বাঁধা দেয়। এছাড়া কোলন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আম ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা রক্তনালী এবং স্বাস্থ্যকর কোলাজেন বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত কমাতে সহায়ক। আমে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পেকটিন, ভিটামিন ‘সি’ কোলেস্টেরল লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখে। ত্বকের জন্য আম খুবই উপকারী। ব্রণ এবং ত্বকের অন্যান্য অনেক সমস্যা প্রতিরোধ করে আম।

এছাড়া সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রমাণিত, আম দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক। আম চোখের পক্ষে ভাল, আমে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ যা প্রায় এক আম ভিটামিন এ এর দৈনিক প্রয়োজনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করতে পারে এই ভিটামিনগুলি আমাদের শরীরকে সহায়তা করে। গবেষণায় প্রমাণিত, আমের খোসা শরীরের ফ্যাটি টিস্যুগুলির বৃদ্ধিও রোধ করতে পারে, আমে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। আমে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, কপার এবং ফোলাট। আর চর্বির পরিমাণ মাত্র এক শতাংশ। আর এই ফল হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখার পাশাপাশি এর ভোজ্য আঁশ হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।