কলকাতা ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় যশ ধেয়ে আসা র খবর নিয়ে বুধবার গোটা সকাল যখন আতঙ্ক রাজ্য জুড়ে, তখন নদী গুলিতে বাড়ছে জল। আর মানুষের সঙ্গে তখন দিশেহারা না-মানুষেরাও। যে সুন্দরবন প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাজ্যকে এবং বাংলাদেশের মানুষকে শেষ পর্যন্ত বড় আঘাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়, বরাবর সেই সুন্দরবনকে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয় এখানকার জীব জন্তুদের। এক দশক আগে আয়লায় জীবজন্তুদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার খবর ছড়িয়ে ছিল। এবারেও এখনো পর্যন্ত যা খবর, তাতে বুধবার সকালে একদিকে ভরা কোটাল সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসের সময় ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ায় প্রবল ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের। আর আতঙ্কে ও জল বাড়তে থাকায় জঙ্গলের আশ্রয় ছেড়ে হরিণ, বন্য শুকর থেকে শুরু করে কত জীবজন্তু যে নিরাপত্তার কথা ভেবে বেরিয়ে পড়েছে, তার হিসেব নেই। এদিন রাতে বনদপ্তর জানিয়েছে, গোসাবা, বাসন্তীর আশপাশ এলাকা থেকে পাঁচটি হরিণকে ভেসে যাওয়ার সময় নদী থেকে উদ্ধার করে গ্রামবাসীরা বনদপ্তর এর হাতে তুলে দিয়েছেন।
আবার এ দিন সকালেই কুলতলীর মইপিট, ভুবনেশ্বরী গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। সাত সকাল থেকে নগেনাবাদ ভুবনেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দাদের বাঘের আতঙ্কে এতটাই চরমে ওঠে যে খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে শেষ পর্যন্ত তারা আর তার ঠাওর পাননি। দুপুরের পরে বৃষ্টি কমলে বনদপ্তর এর কর্মীরা গ্রামে এসে বনবিড়াল জাতীয় কোন বড় জীবের গ্রামে ঢোকার কথা নিশ্চিত করলেও, বাঘ ঢুকেছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি।
কুলতলিতে যখন বাঘের আতঙ্ক তখন সাগর লাগোয়া পাথরপ্রতিমায় কুমির প্রকল্প বানভাসি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। ভাগবতপুর কুমির প্রজনন কেন্দ্র জল ঢুকে পড়েছে বলে খবর ছড়ানোয় প্রবল আতঙ্ক ছড়ায়। কেননা ওই প্রকল্পে ৭০ থেকে ৮০ টি বিভিন্ন মাপের কুমির এখন বড় করা হচ্ছে। এই অবস্থায় যদি জল ঢুকে পরে সে ক্ষেত্রে সেখান থেকে কুমির বেরিয়ে পড়লে কি তার ফল হবে তাতেই আতঙ্ক বাড়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত বনদপ্তর জানিয়েছে, জল ঢুকলেও কুমির বেরোনোর কোন সুযোগ সেখানে নেই।
এদিন ঝড়ের থেকেও জল ঢুকে সুন্দরবনের দ্বীপ গুলিকে একেবারে বন্যাকবলিত করে দিয়েছে। এই অবস্থায় হরিণ থেকে বাঘ বা বন্য শুয়োর কতটা নিরাপদে রয়েছে তা নিয়ে এ দিন রাত পর্যন্ত কোন দিশা দেখাতে পারেনি বনদপ্তর। বসিরহাটের কিছু এলাকায় গ্রামের দিকে নদীর পাড়ে বাঘ যাতে বেরুতে না পারে তার জন্য যে জাল ঘেরা থাকে বেশ কিছু জাল ছিঁড়ে গিয়েছে। একইভাবে গ্রামবাসীরা মনে করছেন, এদিন সকালে কুলতলিতে জঙ্গলে জল ঢুকে পড়ায় বাঘ বা ওই জাতীয় কোন জীব গ্রামে ঢুকে পড়েছিল। রাজ্যের মুখ্য বনপাল বিনোদ যাদব বলেছেন, প্রচুর ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের। তবে জীবজন্তু কি অবস্থায় আছে এখনো তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বনদপ্তরের বহু ক্যাম্প অফিসে জল ঢুকে গিয়ে সেখানে কাজ করার মতো অবস্থা নেই। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ক্ষয় ক্ষতির হিসেব করা হবে।