কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেই ছন্নছাড়া অবস্থা হল রাজ্যের। সোমবার সকালে নারদ মামলায় রাজ্যের প্রথম সারির তিন প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা সহ চারজনের গ্রেপ্তারে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে আন্দোলন। কলকাতা নিজাম প্যালেস থেকে শুরু করে হাওড়া, হুগলি, আসানসোল, বাঁকুড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে বাদ যায়নি রাজ্যের কোন এলাকা। যেখানে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পথে নেমে আন্দোলন শুরু করেছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের আন্দোলন আরও বেশি অক্সিজেন পেয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সিবিআই দপ্তরে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ধরনায় বসে পড়ায়।
ফলে নারদ কান্ডে চার নেতা গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন বিধি কার্যত ভেঙে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে কয়েক হাজার সমর্থকের সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছে এ জে সি বোস রোড চত্বেরে নিজাম পালেস কে ঘিরে। সেখানে হাজার হাজার তৃণমূল সমর্থক দূরত্ব বিধি শিকেয় তুলে রেখেই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। দুপুরে ধৃত নেতাদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয়বাহিনী লাঠিচার্জ শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পাল্টা ইট বৃষ্টি।
[3d-flip-book id=”25345″ ][/3d-flip-book]
শহরের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল সমর্থকরা আন্দোলনে নেমে পড়েছেন। পাশাপাশি এদিন গ্রেপ্তারের ঘটনা পরম্পরায় সোশ্যাল মাধ্যমেও কাটাছেড়া শুরু হয়েছে বিজেপির আচরণ নিয়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই গ্রেপ্তারি কতটা জরুরি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ থেকে বিদ্বজ্জনেরা। কারণ বর্তমান পরিস্থিতি তে এই গ্রেপ্তারি যে রাজনৈতিকভাবে রাজ্যে নতুন করে গন্ডগোল উসকে দেবে তা বলাই বাহুল্য। এই অবস্থায় ২ মে ভোটে তৃণমূলের কাছে ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে দিল্লির বিজেপি পুরনো এই মামলায় তৃণমূলকে প্যাঁচে ফেলতে তাদের নেতাদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। এই দলে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও রয়েছেন। তিনি মনে করছেন, যে সময় যেভাবে গ্রেফতার হয়েছে, তাতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। একইসঙ্গে কেন শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়কে গ্রেফতার করা হয়নি, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কিন্তু সব মিলিয়ে লকডাউনের মধ্যে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতাদের গ্রেপ্তারের পর যেভাবে দিকে দিকে আন্দোলনের নামে মহামারী আইন লংঘন চলছে, তাতে রাজ্যে সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে, তা নিয়ে প্রমাদ গুনছেন চিকিৎসকরা।
সবচেয়ে বড় ঘটনা ২ মে ২০০ র বেশি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল সরকার শপথ নেওয়ার পরেও এখনো পর্যন্ত রাজনৈতিক হানাহানি সেইভাবে মাথাচাড়া দেয় নি। এক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো একটা বড় কাজ হয়ে উঠেছিল রাজ্যের নতুন সরকারের। কিন্তু সেই অবস্থার মধ্যে প্রায় অর্থ দশক আগের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী নেতাদের এখনই গ্রেফতারে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শাসক দল বনাম বিজেপির রাজনৈতিক হিংসা যদি বারে সে ক্ষেত্রে এই ঘটনা তাতে অনুঘটকের কাজ করবে বলে মনে করছেন বর্ষিয়ান পুলিশ অফিসাররা।
এদিকে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিধায়কদের গ্রেপ্তারিতে তার অনুমতি না নেওয়ার কথা জানিয়ে রাজ্যপালের থেকে সেই অনুমতি নেওয়ায় তা বেআইনি বলে দাবি করেছেন। এরইমধ্যে জানা গিয়েছে, রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের আগের মুহূর্তে অর্থাৎ ৯ মে সিবিআই রাজ্যপালের কাছে অনুমতি চায়। এই অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার ব্যাপারে ওইদিনই রাজ্যপাল সেই অনুমতি দিয়ে দেন। ১০ মে অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে শপথ নেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ববি হাকিমরা।
এদিকে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নিজাম প্যালেস সহ বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল যে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করেছে তাতে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর এতেই উঠে আসছে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির চেষ্টার আশঙ্কার কথা।