কলকাতা ব্যুরো: ৪১ বছর বিনা বিচারে জেলে বন্দী থাকার পর অবশেষে শনিবার হাইকোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পেলেন নেপালের বাসিন্দা দীপক জোশি। এদিন দুপুরে তার ভাই ও আত্মীয়রা এসে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। কলকাতায় নেপালের রাষ্ট্রদূতের অফিসের এক সিনিয়র অফিসার হাইকোর্টের নির্দেশে নেপালে গিয়েছেন, তাকে পৌঁছতে। সোমবার তারা ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট দেবেন।
১৯৮১ সালে দার্জিলিঙে একটি খুনের ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে দীপক জোশি নামের এক যুবককে। তিনি তখন থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলে বন্দী ছিলেন। ২০০৪ সালে অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাকে কলকাতায় আনা হয়। তখন থেকেই তিনি দমদম সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন। সলেদিন তাকে পরিবারের হাতে তুলে দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন জেল কর্মীরাও। যদিও মানসিক ভারসাম্যহীন জোশি ছিলেন অনেকটাই ভাবলেশহীনহীন।
গত বছরের শেষ দিকে দমদম জেল থেকে খালাস পাওয়া এক বন্দির মাধ্যমে হ্যাম রেডিও র সদস্যরা জানতে পারেন, এমন এক বন্দির কথা, যিনি দীর্ঘ চার দশক বন্দি রয়েছেন বিনাবিচারে। তারা গিয়ে দেখা করেন ওই বন্দির সঙ্গে। কিন্তু তিনি অনেকটাই মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। তার মধ্যেই তারা কথা বলার পর অনেক খোঁজখবর করে নেপালে তার বাড়ির সন্ধান পান। এরই মধ্যে এই বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বিএন রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি শুনানির জন্য নেয়।
এরপর থেকে হাইকোর্ট এবং রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির উদ্যোগেই ওই মামলার যাবতীয় নথি সংগ্রহ করা এবং আইনজীবিদের নিয়োগ করা হয়। গত সপ্তাহে হাইকোর্ট আপাতত ওই বন্দিকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী তার পরিবারের লোককে তলব করা হয় কলকাতায়। দীর্ঘ আইনি জটিলতা কাটিয়ে এদিন দুপুরে তাকে ছাড়া দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে।
বর্তমানে ৭৪ বছর বয়সের দীপক যোশীর ৯০ বছরের বেশি বয়সের মা এখনো বেঁচে। তিনি ছেলেকে দেখার জন্য এখনও হা পিত্যে শ করে বসে আছেন। অথচ চার দশক আগে ছেলে নিখোঁজ হাওয়ার পর কোনো খোঁজ না পেয়ে এক সময় পরিবার তাকে মৃত ধরে নিয়ে সাধ্য শ্রাদ্ধশান্তি করে ফেলেছিল আর এখন সেই ছেলেকে বৃদ্ধ অবস্থাতেও দেখতে চাইছে ভিনদেশে তার ছোট্ট গ্রাম।
একটা মানুষ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এতটা বছর কেন থাকতে হলো জেলে, সে কথার উত্তর নেই। বাড়ি ফিরেও কি যন্ত্রণার 40 বছর তিনি ভুলতে পারবেন, সে কথা জানা হবে না আমাদেরও।