মৈনাক শর্মা
দিনটি ছিল ৬ অগস্ট ১৯৪৫। এই দিনই জাপানের হিরোশিমাতে পরমাণু অস্ত্রের আঘাতের সাক্ষী হয় গোটা বিশ্ব। তার ঠিক কিছু দিন পরেই অর্থাৎ ৯ অগাস্ট একই হামলা হয় সেই জাপানের নাগাসাকিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানকে হারাতে ওয়াসিংটনের এই নীতির নিন্দায় সরব হয় গোটা বিশ্ব। পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতা ও তার কুফল আজ ভোগ করছে জাপান। এই পরমাণু অস্ত্র এতটাই ক্ষতিকারক যার বেশি প্রয়োগে পৃথিবীর ধ্বংসও হবে দ্রুত। আর এই ভয়াবহতার হাত থেকে বিশ্বকে বাচাতে ইউনাইটেড নেশনস সংগঠন প্রস্তাব দেয় গোটা বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকা। পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতাকে লক্ষ রেখে তার প্রয়োগ নিষিদ্ধ করার অনেক উদ্যোগ নেয় ইউনাইটেড নেশন। যার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো ১৯৬৮ সালে নন প্রলিফারাশন ট্রিটি বা NPT র মাধ্যমে বিশ্বের পরমাণু অস্ত্রে উন্নত দেশগুলির উপর দায়িত্ব দেওয়া হয় যাতে বাকি দেশ গুলিকে তারা পরমাণু অস্ত্র বিকাশে সাহায্য না করে। কিন্তু প্রশংসিত পদক্ষেপ হলেও এই চুক্তি ভঙ্গ করেছে বহু দেশ। তাই আসে ১৯৯৬ সালের কম্প্রিহেনসিভ টেস্ট বার্ন ট্রিটি বা CTBT। এর ফলে নিউক্লিয়ার অস্ত্রর পরীক্ষা মূলক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা। কিন্তু এইবার সম্পূর্ণ নিউক্লিয়ার অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার লক্ষে ইউনাইটেড নেশনস ২০১৭ সালে গ্রহণ করা ট্রিটি অফ প্রহিবিশন অফ নিউক্লিয়ার উইপনস বা TPNW চুক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরমাণু ও কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল অস্ত্র বিলুপ্ত করার লক্ষে এই চুক্তি কে ২০২১ সালেই লাগুড় পথে রাষ্ট্র সংঘ।
পরমানু অস্ত্রের ভয়াবহততার সাক্ষী রয়েছে সবাই। এই অবস্হায় রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে অনেক দেশ। কিন্তু ভারত সহ আবার অনেক দেশই এই চুক্তিতে সহমত নয়। TPNW চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ, তবে ২০১৭ সালের হওয়া চুক্তির মধ্যস্ততায় ভারতের অংশগ্রহণ ছিল না। রাষ্ট্র সংঘের সাম্প্রতিক চুক্তিতে ভারতের তরফে মত দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এর আগেও NPT ও CTBT চুক্তিতেও সহমত হয়নি ভারত। দিল্লির মতে রাষ্ট্র সংঘের প্রস্তাব প্রশংসনীয় হলেও পরমাণু অস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করার পক্রিয়ায় হটকারিতা না করে বিভিন্ন ধাপে নিষ্ক্রিয়তার পথে এগোনো উচিত।
ইউনাইটেড ন্যাশনের প্রস্তাব প্রশংসনীয় হলেও দিল্লির মতকে সমর্থন জানাচ্ছে বিশ্লেষকরা। বর্তমান পরিস্থিতে না হলেও বার বার পরমাণু হামলার হুমকি দেওয়া পাকিস্তান ও অন্য দিকে প্রায়শই চীনের সাথে সীমান্ত উত্তেজনার সমস্যায় ভারত দ্বিপাক্ষিক আক্ক্রমণের সামনে রয়েছে। এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘের চুক্তিতে সাক্ষর করলে শর্তানুযায় সম্পূর্ণ পরমাণু অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করতে হবে, যা একদমই সম্ভব নয়। তা ছাড়া NPT ও CTBT মতো চুক্তির পরেও পরমাণু অস্ত্রর পরীক্ষা মূলক প্রয়োগে দেখা গেছে বহু দেশ কে এই অবস্থায় নিজের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য না দিয়ে সম্পূর্ণ পরমাণু অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করা যুক্তি সম্মত নয় শুধু ভারত ই নয় বর্তমান ভূ রাজনীতি তে অস্থিরতার জেরে যে কোনো সময় হতে পারে যুদ্ধ আর এই যুক্তি কে সামনে রেখে বিশ্লেষকদের সুরেই চুক্তিতে সহমত দেয়নি জাপান রাশিয়া চীন পাকিস্তান।
বিজ্ঞানের উন্নতির সাথেই বেড়ে চলছে যুদ্ধে আধুনিকতা। পরমাণুর পথেই বেড়ে চলেছে কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল অস্ত্র প্রয়োগের সম্ভাবনা। এই অবস্থায় কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল আক্ক্রমণের জন্য কোন দেশ কতটা প্রস্তুত সেই প্রশ্নর উত্তর জানা নেই কারুরই। করোনা মহামারীর মতো বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলো না কোনো দেশ। এই বিপর্যয় কোনো পরিকল্পিত কিনা বা এর উৎসের রহস্য সন্ধানে নেমেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু। কিন্তু ভবিষ্যতে কোরোনার মতো কোনো বায়োলজিক্যাল জীবাণুর আক্ক্রমণ রুখতে বর্তমানে চুক্তির মাধ্যমে ইউনাইটেড নেশন প্রশংসনীয় কাজ করলেও সাম্প্রতিক চুক্তিতে কতটা সফল হবে তা এক বড়ো চ্যালেঞ্জ।