মৈনাক শর্মা
ইতিহাসের শোনা একটি শব্দ বন্ধ। কেবল অন্য দেশের ভূখণ্ডই নয়, যুদ্ধ হলো এক রাজ্যের শক্তির ও প্রজাদের প্রতি শাসকের আস্থার পরিচয়ও। অর্থাৎ যে দেশ যত বেশি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকবে, তার অভ্যন্তরীণ শান্তি তত বেশি মজবুত হবে। আবার এই যুদ্ধের ভয় থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় প্রতিরক্ষা। প্রাচীন কালে সৈন্য, কামান, রক্ষণশীল দুর্গ ইত্যাদির প্রয়োজন হতো প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধের জন্য। শাসকের শক্তিশালী যুদ্ধের ও প্রতিরক্ষার রণকৌশলী ছিল প্রজাদের আক্ক্রমণের চিন্তা বিহীন মনোবল। সময়ের সাথে আধুনিকতায় এসেছে প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধক্ষত্রে। এসেছে মিসাইল সিস্টেম, সমুদ্রে নজরদারি ও প্রতিরক্ষার জন্য জাহাজ ও সাবমেরিন আর এমনই এক যুদ্ধ ভাবের জন্য প্রশ্নের মুখের ভারতের প্রতিরক্ষা।
ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক আক্ক্রমণের সম্মুখীন হতে পারে ভারত। এমতা অবস্থায় প্রশ্নের মুখে থাকছে দিল্লির প্রতিরক্ষা। সম্প্রতি নাগরনো কারাবাক এলাকা দখল নিয়ে আলমেনিয়া ও আজারবাইজান দুই দেশের বিবাদ যুদ্ধের পরিণতি নেয়। প্রায় ৪৪ দিন ব্যাপী চলা এই যুদ্ধে হার হয় আলমেনিয়ার। আজারবাইজান সরকারের দাবি, এই যুদ্ধে তারা বিপুল ক্ষতি করে আলমেনিয়ার। প্রায় ১৫০ টি মিলিটারি বাহন, ১১ টি মিলিটারি পোস্ট– যার ফলে ২৩০০ সৈন্যের মৃত্যু হয় আলমেনিয়ার। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আজারবাইজান সৈন্যেদের যুদ্ধ জয়ের প্রধান কারণ হলো, তুর্কির সামরিক শক্তির জন্য বিশেষ করে তুর্কির তৈরী বাইরেক্টার ড্রোন (TB 2 )। আজারবাইজান সরকার দাবি করে, এই ড্রোনের সাহায্যে তারা আলমেনিয়ার ৬০ টি আন্টি এয়ার ক্র্যাফট সিস্টেম, ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। যার মধ্যে রাশিয়ার এস ৩০০ ও রয়েছে। আজারবাইজানের এই দাবিতেই শুরু হয় কৌতূহল। কারণ এস ৩০০ আন্টি মিসাইল সিস্টেম এরই উন্নত মডেল হলো রাশিয়া থেকে ভারতে আগত এস ৪০০ মিসাইল সিস্টেম। তাই প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনুমান, তুর্কি ও পাকিস্তানের বেড়ে ওঠা বন্ধুত্বের সম্পর্কের জেরে এমনি এক ড্রোন ইসলামাবাদকে উপহার দিতে পারে তুর্কির সরকার। এই ক্ষেত্রে চাপে পড়তে পারে দিল্লির রক্ষণ বিভাগ। বিশ্লেষকদের মতে, সামান্য একটি ড্রোন যদি এস ৩০০ র মতো দামি ও উন্নত আন্টি মিসাইল সিস্টেমকে ধ্বংস করতে পারে, সে ক্ষেত্রে এস ৪০০ প্রতিরক্ষা চুক্তি কতটা কার্যকর হবে ভারতের জন্য। তাছাড়া তুর্কির বাইরেক্টার ড্রোন আন ম্যান কবাট এরিয়াল ভেহিকল অর্থাৎ মানবহীন এবং দাম কম হওয়াতে একদিকে যেমন মানুষের প্রাণের সুরক্ষা প্রদান করবে, তেমনি খরচ কমাতেও সাহায্য করতে পারে। সেক্ষেত্রে সুবিধা রয়েছে পাকিস্তানের দিকে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির তৈরী ড্রোনের চেয়েও বেশি শক্তিশালী তুর্কির টি বি ২ ড্রোন। সদ্য সাক্ষর হওয়া BECA চুক্তির জেরে ভারতে আগত আমেরিকার অন্যতম এম কিউ ৯ ড্রোনের তুলনাতে এটি হালকা ও বেশি শক্তিশালী। যা লেসার গাইডেড মিসাইল সহ কম উচ্চতা এলাকাতে আক্ক্রমণে সক্ষম। আমেরিকার তৈরী এম কিউ ৯ ড্রোনের দাম বেশি হওয়াতে ভারতে এর পরিমাণ কম হবে। তাছাড়া এম কিউ ৯ ড্রোনের ব্যবহার মূলত হবে হিমালয় ও ভারতে মহাসাগরের উপর নজর দাড়ি বাড়তে। সেক্ষেত্রে ভারতে পাক সীমান্তে থাকছে কেবল এস ৪০০ আন্টি মিসাইল সিস্টেম। মানে সুরক্ষা ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।
কিছুদিন আগে এল ও সি তে হওয়া পাক হামলার পুনরাবৃত্তি আবারো হতে পারে। সেক্ষত্রে কেবল মাত্র এস ৪০০ মিসাইল সিস্টেমের উপর পুরোপুরি ভরসা রাখলে চলবে না দিল্লির। সুরক্ষাতে ভারতের আন ম্যান কবাট এরিয়াল ভেহিকল ড্রোনের প্রয়োজন। এর আগেও ডি.আর.ডি.ও র ড্রোন প্রকল্প ঘাতক এখনো পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়নি। যা দ্রুত গতিতে সম্পূর্ণ করতে হবে। এছাড়া এই ড্রোনের জন্য দিল্লি, মিত্র দেশ ইসরাইলের সাহায্য নিতে পারে, যাতে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত নিজেই ড্রোন তৈরিতে আত্মনির্ভর হয়।