কলকাতা ব্যুরো: আজও তার নামে জেলায় জেলায় পোস্টার পড়েছে। ‘আমরা দাদার অনুগামী’রা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আছেন বলে জানান দিয়েছেন পুরুলিয়া বাঁকুড়ায়। আবার গত মাস দুয়েক ধরে তাকে নিয়ে চলা এই রহস্যময় পরিবেশ কাটাতে তৃণমূল আসরে নামিয়েছে দুই প্রভাবশালী সাংসদকে। সূত্রের খবর, তারা শুভেন্দু অধিকারীর মান ভাঙানোর চেষ্টা করছেন।
শুভেন্দুকে নিয়ে দলের মধ্যে এই টানাপোড়েনের মধ্যেই জেলায় জেলায় তৃণমূলের বিধায়কদের মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। কোচবিহারে মিহির গোস্বামী আবার ফেসবুকে দলের কাজকর্ম সম্পর্কে ক্ষোভ জানিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এরপরেও দলে থাকা উচিত কিনা। গত কয়েকদিন ধরেই তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় দল নিয়ে প্রকাশ্যে নানান রকম মন্তব্য করছিলেন। এদিন তার সেই বিদ্রোহে সমর্থন জানিয়েছেন, আরেক তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার বসুনিয়া। সিতাই এর শাসক দলের বিধায়কের অভিযোগ, মিহির গোস্বামীকে অপদস্থ করতে দলের একাংশ কলকাঠি নাড়ছে।
দলের একটা বড় অংশের মধ্যে চাপা ক্ষোভ শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগেই, যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্যে সংগঠনে নামানো হয়। তখন থেকেই তাকে নানাভাবে ক্ষমতা দেওয়া শুরু হয়। যা নিয়ে দলের বহু বর্ষিয়ান নেতা আড়ালে-আবডালে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। এমনকি তখন থেকেই একদিকে মুকুল রায় ও অন্যদিকে দক্ষ সংগঠক শুভেন্দু অধিকারী- তার নেতৃত্বে মানতে চাইবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কেননা তখনো পর্যন্ত মুকুল রায় ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাসীন ব্যক্তি। আর তৃণমূল কংগ্রেসে মাস লিডার বলতে যদি প্রথম হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাহলে অবশ্যই তারপরে স্থান হবে শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি একাই দক্ষ সংগঠক। ফলে যারা মাঠে নেমে এবং দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন, তাদের পক্ষে চাপিয়ে দেওয়া কাউকে মেনে নেওয়া কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল।
আর এখন সেই প্রশ্নের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে প্রশান্ত কিশোরকে ঘিরে বিতর্ক। ২০১৯ সালে বিজেপি রাজ্য থেকে ১৮ টি আসন পাওয়ার পরে, ভোট কুশলী পিকেকে পরামর্শদাতা হিসেবে মাঠে নামায় তৃণমূল। প্রশান্ত কিশোরের লোকজন জেলায় জেলায় গিয়ে বিধায়ক থেকে শুরু করে অন্যান্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাড়াও কথা বলেন আমজনতার সঙ্গে। মিহির গোস্বামীদের অভিযোগ, তাদের অন্ধকারে রেখে প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে বিভিন্ন পদে লোক বসানো হচ্ছে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুর্শিদাবাদের শাসকদলের বিধায়ক নিয়ামত শেখ। এর আগে বিতর্কে মুখ খুলেছেন সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য। পুরুলিয়ার এক প্রশাসক ফেসবুকে লিখেছেন, এখন চালাচ্ছে ভুতে। বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তাকে অপসারণ করা হয়েছে।
যদিও শুভেন্দু যেভাবে প্রকাশ্যেই নিজের মতো করে নানান অনুষ্ঠান করছেন এবং সেসব মঞ্চে রহস্য রেখেই নানান কথা বলছেন, তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট, তিনি দলের আচার আচরণে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এখন সঠিক সময় মনে করে, তিনি কিছুটা সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এখনও পর্যন্ত কোথাও তিনি দল ছাড়ছেন, এমন কথা স্পষ্ট করে বলেননি। আবার দলের কোনো নেতা নেত্রী সম্পর্কেও নাম না করে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। যদিও তার কাজকর্ম এবং আচার-আচরণে যথেষ্টই বিড়ম্বনা বেড়েছে তৃণমূলের। কিন্তু দক্ষ সংগঠক এবং প্রভাবশালী শুভেন্দু অধিকারীকে এত সহজে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত দলের একাংশ।
শুভেন্দুকে নিয়ে রহস্যের মধ্যেই জেলায় জেলায় শাসক বিধায়কদের প্রকাশ্যে বিষোদগার
Previous Articleধারণার ওপরে যাচ্ছে বাজার
Next Article বাম-কংগ্রেস জোটের প্রথম বৈঠকে আলোচনা প্রার্থী নিয়ে
Related Posts
Add A Comment