কলকাতা ব্যুরো:: লকডাউন আর আম্পানের জোড়া ফলায় সুন্দরবনে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে। কর্মসংস্থানের অভাবে পেটের টানে গভীর জঙ্গলে মাছ আর কাঁকড়া ধরতে গিয়ে এ বছরের প্রথম কয়েক মাসে অন্তত ১৮ জন বাসিন্দা বাঘের পেটে গিয়েছেন। যা গত বছরের তুলনায় অন্তত পাঁচটি বেশি। সরকারি হিসেব বলছে, ২০১৭ সালের ১১ জন, ২০১৮ সালের ও ২০১৯ সালে ১৩ জন করে বাঘের হামলায় মারা পড়েছিলেন। আর এবার জানুয়ারি থেকে আগস্ট এর মধ্যেই সেই সংখ্যাটা ১৮ তে উঠে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
মূলত করোনা আবহে লকডাউন এর আগেই পরিযায়ী শ্রমিক এর কাজে যাওয়া গ্রামবাসীরা সুন্দরবনের ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু তারপরে দেশ আনলক হলেও এখনো পর্যন্ত ট্রেন চলছে না যানবাহনও তুলনায় কম চলছে। এই অবস্থায় শ্রমিকের কাজে ফিরতে পারছেন না তারা। এরইমধ্যে মে মাসে আম্পান এর জেরে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছেন সুন্দরবনের বাসিন্দারা বহু মানুষ বাড়িঘরের ক্ষতির জন্য কাজের জায়গা থেকে ফিরে এসেছেন গ্রামে। কিন্তু তারপরে কাজ জোটেনি। ফলে কর্মসংস্থানের জন্য তাই তাদের ছুটতে হচ্ছে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল।
এমনিতে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে মধু পারতে গেলে অথবা কোর এলাকার মধ্যে মাছ ধরার জন্য বনদপ্তর এর অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু বনদপ্তর এর অফিসাররাই মানছেন যে পরিমাণ মৎস্যজীবী সরকারের থেকে লাইসেন্স নেন, তার অন্তত তিন গুণ লোক প্রতিদিন বিপদ উপেক্ষা করে ওইসব নিষিদ্ধ জঙ্গলে বা নদীতে মাছ ধরতে যান। আর সেখানেই ঘাপটি মেরে থাকা বাঘের কবলে পড়েন।
দুই ২৪ পরগনার সুন্দরবনের মূলত সাতজেলিয়া, লাহিরিপুর, কুমিরমারি, হেমনগর, কালিতলা সজনেখালি এলাকার মানুষ এমনভাবে বিপদের মুখে পড়ছেন। বনদপ্তর ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে অনুমতি ছাড়া গভীর জঙ্গল এবং নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পেটের দায়ে গ্রামবাসীরা ছুটছেন সেই নিষিদ্ধ দিকেই। একটু বেশি মাছ ধরে, একটু বেশি পয়সা পাওয়ার আশায়। আর সেখানেই ওত পেতে থাকা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন কেউ কেউ।