এক নজরে

দেড় কোটি মানুষের দেশে ৮৬০টি ভাষা

By admin

November 05, 2024

ওশেনিয়া মহাদেশের ছোট্ট একটি দেশ পাপুয়া নিউগিনি। প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যভাগ ও দক্ষিণাংশের দ্বীপসমূহকে একত্রে ওশেনিয়া বলা হয়। তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এই অঞ্চলকে- মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া এবং পলিনেশিয়া। মতান্তরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে অস্ট্রেলেশিয়া ভাগে রেখে ওশেনিয়া অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৪টি স্বাধীন দেশ আছে এই মহাদেশে- অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, কিরিবাতি, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, ফেডারেল স্টেট অব মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, নিউজিল্যান্ড, পালাউ, পাপুয়া নিউ গিনি, সামোয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টোঙ্গা, টুভালু, ভানুয়াতু

পাপুয়া নিউগিনি দেশটির মূলমন্ত্র হল ‘বৈচিত্র্যতার মধ্যে এক হওয়া’। দেশটি অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে স্বাধীন হয় ১৯৪৯ সালের ১ জুলাই। পাপুয়া নিউগিনির আয়তন ৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৪০ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনে মোটামুটি বড় এই দেশটির জনসংখ্যা কিন্তু মাত্র দেড় কোটি।এই জনসংখ্যার ৮০ ভাগই থাকেন গ্রামাঞ্চলে। জনসংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি বড় নয় ঠিকই কিন্তু পাপুয়া নিউগিনি দেশটির ভাষাগত বৈচিত্র্য খুবই সমৃদ্ধ। বিশ্বের ৮৬০টি ভাষা প্রচলিত আছে দেশটিতে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা এঙ্গা। কেন্দ্রবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় দু’হাজার মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। এর পরে আছে মেলপা আর হুলি।নিউ গিনির পুরোনো ভাষাগুলোকে বলা হয় পাপুয়ান, যেসব ভাষায় কথা বলতেন প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে সেখানে বসতি স্থাপনকারীরা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে, কয়েকটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষার আগমণ ঘটে দেশটিতে। এগুলো প্রচলিত ভাষার চেয়ে একদম ভিন্ন। ধারণা করা হয়, একটি মাত্র উৎস থেকেই আসে ভাষাগুলো।

উনিশ শতকে ইংরেজ ও জার্মানভাষীরা নিউ গিনি শাসন শুরু করে। তবে স্বাধীনতার পর মাত্র তিনটি ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয় দেশটি। সেগুলো হলো হিরি মোতু, টোক পিসিন ও ইংরেজি। নিউ গিনিতে এমন অনেক ভাষা আছে, যা শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠী বা মাত্র কয়েকজন মানুষই বলে থাকে। এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে ১১টি ভাষা। সংরক্ষণের অভাবে আরও অনেক ভাষা হারিয় যেতে পারে বলে আশঙ্কা ভাষাবিদদের। পুরো বিশ্বে ভাষার ক্ষেত্রে এরকম বৈচিত্র্যের দেখা মেলে শুধু এই দেশটিতেই। পাপুয়া নিউগিনিতে কীভাবে এল এত ভাষার সমাহার? সেই দেশের বাসিন্দারাই বা কীভাবে এত বিচিত্র ভাষা আয়ত্ত করল, এই প্রশ্ন মনে আসাটাই সবাভাবিক। পাপুয়া নিউগিনির পুরোনো ভাষাগুলোকে বলা হয় ‘পাপুয়ান’, যা আজ থেকে প্রায় ৪০ হ্যাজার বছর আগে সেখানে প্রথম বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে সেখানকার জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভাষা ‘পাপুয়ান’-এর অন্তর্ভুক্ত হলেও এদের উৎপত্তির ভিত্তি কিন্তু এক নয়।

আসলে এই ভাষাগুলো আলাদা আলাদা কয়েক ডজন অসম্পর্কিত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এরকমও কিছু ভাষার সন্ধান এখানে পাওয়া যায়, যা কোনো পরিবারেরই অংশ না। এর শিকড় কোথায়, তা-ও জানা যায়নি। আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বছর আগে, পাপুয়া নিউগিনিতে কয়েকটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষার আগমন ঘটে। এগুলো দেশটিতে এর পূর্বে প্রচলিত ভাষার তুলনায় ভিন্ন ছিল এবং হয়ত সেগুলো একটি মাত্র উৎস থেকেই এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, উৎসটি তাইওয়ানীয় ছিল। এত বৈচিত্র্যময় ভাষার সমাহারের ধকল সামলাতে না সামলাতেই দেশটিতে নতুন করে আরও ভাষার আগমন ঘটলো উনিশ শতকের দিকে। এই সময় সেখানে ইংরেজ এবং জার্মানভাষীদের আগমন ঘটে এবং দেশটি শাসন করা শুরু করে। স্বাধীনতার পর এত ভাষার মধ্যে পাপুয়া নিউগিনি শুধু তিনটি ভাষাকেই সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়।

এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে টোক পিসিন। এটি একটি ইংরেজি-ভিত্তিক ক্রেওল ভাষা। পাপুয়া নিউগিনিতে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষা এবং সেই দেশে এটি সার্বজনীন ভাষা হিসেবে পরিচিত। ক্রেওল হলো ইউরোপীয় এবং কৃষ্ণাঙ্গদের সংমিশ্রিত জাতিবিশেষ। এরপরেই বেশ গুরুত্ব সহকারে অবস্থান করছে হিরি মোতু এবং ইংরেজি। হিরি মোতু একটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষা। অস্ট্রোনেশীয় ভাষাগুলো মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মাদাগাস্কার এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই ভাষা পরিবারে হিরি মোতুসহ মোট ১ হাজার ২৫৭টি ভাষা রয়েছে। ব্যবহারকারীদের সংখ্যার ভিত্তিতে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ ভাষা পরিবার। আর ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ভাষার সংখ্যার ভিত্তিতে এটি বিশ্বে দ্বিতীয়।

পাপুয়া নিউ গিনির আদিবাসী জনসংখ্যা বিশ্বের অন্যতম ভিন্নধর্মী। পাপুয়া নিউ গিনির কয়েক হাজার আলাদা সম্প্রদায় রয়েছে, যার বেশিরভাগই মাত্র কয়েকশ লোক। কেবল ভাষা নয়, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য সবই আলাদা।পাপুয়া নিউ গিনির অনেক জায়গা জঙ্গলে ঘেরা। প্রাকৃতিক দৃশ্য অতুলনীয়। ফলে এখানে সারাবছর নানা দেশের পর্যটকের ভিড় জমে। এখানকার বেশিরভাগ আদিবাসী এখনো এসব জঙ্গলে বসবাস করে। তারা এখনো আদিম মানুষের মতোই জীবনযাপন করে। মাছ ধরা, বন জঙ্গল থেকে খাবার সংগ্রহ করে এদের জীবন চলে।