কলকাতা ব্যুরো: গত কয়েকদিন ধরেই বিকেলের দিকে বৃষ্টির থেকেও বজ্রপাতের ঘনঘটায় আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয় বাজের আঘাতে। সোমবার সেই সংখ্যাটা সাম্প্রতিক অতীতের সব বজ্রপাতে মৃত্যু সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেল। এ দিন রাত পর্যন্ত রাজ্যে বজ্রপাতে ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজ্য সরকার মৃতদের দু লক্ষ টাকা করে ক্ষতি পূরণের ঘোষণা করেছে। আবার এ দিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী টুইট করে বজ্রপাতে মৃতের পরিবারকে এককালীন দু’লক্ষ টাকা ও জখম দের ৫৯ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আবার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার মৃতদের বাড়ি গিয়ে পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন।এদিন রাত পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, হুগলিতে-১১, মুর্শিদাবাদে ‐৯, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ২ জন করে, নদীয়া য় একজন মারা গেছেন। মৃতদের পরিবারকে দু লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে রাজ্য সরকার জানিয়েছে।
দেশে প্রথম ২০১৯ সালে বজ্রপাতের হিসেব-নিকেশ করা শুরু করে মৌসম ভবন। ওই বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, ৬ মাসে প্রায় তিন লক্ষ বাজ পড়েছে বাংলার মাটিতে। যা কেড়ে নিয়েছিল অন্তত ৭১টি প্রাণ। দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বেশ কয়েক বছর নজর করার মত বেড়েছে। এত দিন কোনও তথ্য না-থাকায় তুলনা টানার সুযোগ ছিল না। সেই সুযোগ তৈরি করে এই প্রথম দেশে বাজ পড়ার পরিসংখ্যান লিপিবদ্ধ করলেন বিজ্ঞানীরা। দেশের কোথায় কত বজ্রপাত হচ্ছে, তৈরি হয়েছে তার মানচিত্রও। যেখানে পূর্ব ভারত, বিশেষ করে বাংলা-ঝাড়খণ্ড-ওডিশা সীমানার ছোটনাগপুর মালভূমি, সুন্দরবন এলাকাকে ‘বজ্রপাত-প্রবণ এলাকা’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
এই অবস্থায় ২০২১ সালের মধ্যে অন্তত ৮০% মৃত্যু কমানোর পরিকল্পনা করে মৌসম ভবন। দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট অবজার্ভিং সিস্টেমস প্রোমোশন কাউন্সিলকে। তারাই মৌসম ভবন, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজি ও ইসরোর নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুতের ঝলক গোনার কাজ শুরু করে দু বছর আগের থেকে। মূলত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর বাজ গোনা হয়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাছ থেকে নেওয়া হয় মৃতের সংখ্যা।
যদিও এবছর এখনো পর্যন্ত বর্ষা আসার আগেই যা প্রবণতা তাতে বাজ পড়ার ঘনঘন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এই কারণে গ্রামে-গঞ্জে মানুষকে সতর্ক করতে কোমর বেঁধে নেমেছেন রাজ্য এবং আবহাওয়া দপ্তর। আবহাওয়া দপ্তরের এক অফিসার বলেন, কখন বাজ পড়বে সেটা যদি দ্রুত এবং ঠিক কোন জায়গায় পড়বে তা যতটা সম্ভব স্পষ্ট করে যদি পূর্বাভাস দেওয়া যায়, তাহলেই বাজে মৃত্যুর হাত থেকে অনেকটা মানুষকে বাঁচানো সম্ভব।