কলকাতা ব্যুরো: ১২ বছর কেটে গিয়েছে মাঝে। ৪০ এর দোরগোড়ায় এসে মকবুল হোসেন ফিরে পেলেন তার পরিবার। যদিও চেন্নাইয়ে কোনভাবে হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আর তার বাড়ি পাওয়া গেল ১২ বছর পর এ রাজ্যের কোচবিহার জেলায়। এমন প্রায় অসাধ্য কাজ বাস্তবে করে তুলেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর এক্ষেত্রে তাদের মূল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। একটি ইংরেজি দৈনিক চেন্নাই থেকে তুলে ধরেছে সেই কাহিনী।
চেন্নাইযে দুস্থদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্যভূম করাঙ্গল নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তার সঙ্গে যুক্ত জ্যাকব নামে এক ব্যক্তি। চেন্নাইয়ের বরপালানি এলাকায় তার যাতায়াত। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে দেখেন ফুটপাতের ধারে একটা লোক বিভিন্ন রকম ফেলে দেওয়া জিনিস পত্র মধ্যে বসে রয়েছে। প্লাস্টিক, ব্যাগ, কাঁথা, কম্বল নানান রকম বাড়ির লোকের ফেলে দেওয়া জিনিস তার সঙ্গে। দেখেই মনে হয় লোকটি মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে একরকম ধরে বেঁধে জ্যাকব নিয়ে এসে তোলে তাদের হোমে।
এরপর শুরু হয় চিকিৎসা। তার মানসিক সমস্যা ধরা পড়ে। ছিল রক্তাল্পতার সমস্যা। তাকে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা করে, রক্ত দিয়ে এবং মানসিক চিকিৎসার পর আবার একটু স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে শুরু করেন মকবুল হোসেন। তখন তাকে তার বাড়ি কোথায়, কে কে আছে, এসব জিজ্ঞেস করেন ওই হোমের কর্মীরা। ধীরে ধীরে মনে করতে থাকেন মকবুল, তার পুরনো ইতিহাস। জানান এ রাজ্যের কোচবিহার জেলার মাওমারি পঞ্চায়েতের চোদ্দোথারকোটা গ্রামে তার বাড়ি। তার বাবার নাম জাকির উদ্দিন মিয়া। তারা চার ভাই, এক বোন বোনের নাম মোমিনা। তিনি বিবাহিত। তার দুই ছেলেমেয়ে আছে জানান সেকথাও। তার বাড়ির এলাকায় একটি মসজিদ রয়েছে, যার নাম শালমারা মসজিদ।
এর পরেই ওই হোমের কর্মীরা শুরু করেন খোঁজখবর। গুগল সার্চ করেন খুঁজতে খুঁজতে সেই মসজিদের একটি ফোন নাম্বার উদ্ধার করেন সেখানকার হোমের এক কর্মী। তার পরেই জানতে পারেন যে, এই ব্যক্তি ১২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ওই গ্রামের মকবুল হোসেন। সেখান থেকে আরো জানা যায়, তার এক ভাই শহীদুল হক রাজমিস্ত্রির কাজ করেন কেরালার এরনাকুলামে।
তারপরের কাজটা খুবই সোজা। তার ভাইকে ডেকে পাঠিয়ে তার তার হাতেই তুলে দেওয়া হয় ১২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মকবুলকে। ওই সংস্থা বলছে, এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যথেষ্ট সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এমন ক্ষেত্রে যোগাযোগ অনেকটাই সুবিধা হয়ে গিয়েছে। তার সুফল পাওয়া গেল এই ব্যক্তির পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে। সদ্য তাকে নিয়ে এখন বাড়ি ফিরছেন মকবুল হোসেনের ভাই।